নবজাতক শিশুর কান্নার কারণ: কীভাবে বুঝবেন এবং করণীয় কী?

নবজাতক শিশুর কান্নার কারণ

নবজাতক শিশুর কান্না তাদের মনের অবস্থা প্রকাশ করার একমাত্র ভাষা। কান্নার মাধ্যমে তারা তাদের অসুবিধা বা চাহিদা প্রকাশ করে। তবে কিছু কিছু সময় এই কান্না মা-বাবার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই আর্টিকেলে আমরা নবজাতক শিশুর কান্নার সম্ভাব্য কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিশদ আলোচনা করব।

নবজাতক শিশুর কান্নার কারণ

শিশুর কান্নার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:

  1. ক্ষুধা
    নবজাতক শিশু প্রায়ই ক্ষুধার কারণে কাঁদে। সময়মতো খাবার না পেলে কান্না তাদের প্রধান প্রতিক্রিয়া। শিশু যখন হাত বা আঙুল মুখের দিকে নেয় বা চুষতে চেষ্টা করে, তখন এটি তাদের ক্ষুধার ইঙ্গিত হতে পারে।
  2. ঘুমানোর সমস্যা
    পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শিশুরা অস্থির হয় এবং কান্না করে। সঠিক পরিবেশ এবং সময়ে ঘুম না হলে শিশুর মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।
  3. পেটের গ্যাস বা বদহজম
    নবজাতকের কান্নার একটি বড় কারণ হতে পারে পেটের গ্যাস বা বদহজম। ভুল পদ্ধতিতে দুধ পান করানো বা পর্যাপ্ত ঢেকুর না তোলার ফলে পেটে বাতাস জমা হতে পারে, যা শিশুর জন্য অস্বস্তিকর।
  4. অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগা
    নবজাতকের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনেও তারা বিরক্ত হতে পারে।
  5. ডায়াপার বা পোশাকের অস্বস্তি
    ভেজা ডায়াপার বা টাইট পোশাক শিশুকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। তাই এমন পরিস্থিতিতে শিশুর কান্না হতে পারে।
  6. অতিরিক্ত উত্তেজনা বা ক্লান্তি
    অনেক সময় বেশি মানুষের মাঝে থাকার কারণে শিশুরা ক্লান্ত বা উত্তেজিত হয়ে কাঁদে। শান্ত পরিবেশে নিয়ে গেলে তারা স্বস্তি পায়।

ইনফ্যান্টাইল কলিক: একটানা কান্নার বিশেষ কারণ

অনেক সময় নবজাতক শিশুরা বিশেষ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে কান্না করে, যাকে ইনফ্যান্টাইল কলিক বলা হয়। এটি সাধারণত ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

ইনফ্যান্টাইল কলিকের লক্ষণ:
  • প্রায় প্রতিদিন একই সময়ে (বিশেষ করে সন্ধ্যায়) একটানা কান্না।
  • কান্নার সময় শরীর শক্ত করে ফেলা বা মুখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • পেটের ব্যথা বোঝাতে হাঁটু ভাঁজ করে পেটের দিকে টান দেওয়া।
  • কান্নার পর নাক বা চোখ দিয়ে পানি ঝরা।

ইনফ্যান্টাইল কলিকের কারণ:

  • পেটের গ্যাস বা হজমের সমস্যা।
  • মায়ের খাদ্যাভ্যাস থেকে শিশুর প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া।
  • সঠিক পদ্ধতিতে দুধ পান না করানো।
  • শিশুর মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্যহীনতা।

নবজাতকের অতিরিক্ত কান্নার কারণ ও প্রতিকার

নবজাতকের কান্নার কারণ বোঝা এবং সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু প্রতিকার উল্লেখ করা হলো:

  1. ক্ষুধার কান্না নিরসনে: নবজাতককে সময়মতো খাওয়ান। বুকের দুধই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো, তবে ফর্মুলা দুধ খাওয়ানো হলে সঠিক নিয়ম মেনে খাওয়াতে হবে।
  2. পেটের গ্যাস প্রতিরোধে: দুধ খাওয়ানোর পর শিশুকে ঢেকুর তুলতে সাহায্য করুন। খাওয়ানোর সময় শিশুকে সঠিক পজিশনে রাখুন।
  3. আরামের পরিবেশ সৃষ্টি করুন: শিশুদের জন্য শান্ত এবং আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। অতিরিক্ত উত্তপ্ত বা ঠান্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
  4. ডায়াপার পরিবর্তন করুন: ডায়াপার বা পোশাকের কারণে অস্বস্তি হলে তা তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করুন।
  5. ব্যায়াম করান: নবজাতককে মৃদু হাত-পা নাড়ানোর মাধ্যমে ব্যায়াম করান। এটি পেটের বাতাস কমাতে সাহায্য করে।
  6. ডাক্তারের পরামর্শ নিন: যদি কান্না অতিরিক্ত হয় এবং উপরের কোনো পদ্ধতিতেই কাজ না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কেন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়?

শিশুর কান্না তাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার অংশ। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কান্নার কারণে যদি তাদের বৃদ্ধি বা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে, তবেই এটি চিন্তার কারণ হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবজাতকের কান্না সাধারণ এবং তা নিজে থেকেই কমে যায়।


শেষকথা

নবজাতক শিশুর কান্নার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বাবা-মায়ের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হলেও ধৈর্য ও সঠিক যত্নের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। শিশুর সুরক্ষিত ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে তাদের কান্না কমবে এবং তারা সুস্থ থাকবে।